নেটওয়ার্কিং-এর মৌলিক উপাদান ও স্থাপনে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরির জন্য কম্পিউটারগুলো যুক্ত করতে যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়, সেগুলোকে নেটওয়ার্ক ডিভাইস বলা হয়। এসব যন্ত্রপাতি মূলত নেটওয়ার্কে ডেটার প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে এবং সংকেত ও ডেটাকে তার সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে। এসব যন্ত্রপাতির মধ্যে রয়েছে রাউটার, সুইচ, মডেম, গেটওয়ে, হাব, নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড ইত্যাদি।
সূচিপত্র-
নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড (NIC)
কম্পিউটারকে নেটওয়ার্কভুক্ত করার জন্য একটি বিশেষ বর্তনীর প্রয়োজন হয়। এ বর্তনীকে যে কার্ডের উপর সজ্জিত করা হয় তাকেই নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড বলে। বিভিন্ন ধরনের অতিরিক্ত সুবিধা প্রাপ্তির জন্য ব্যবহৃত উক্ত কার্ডসমূহকে Add-in Card হিসেবে অভিহিত করা হয়।
মাদারবোর্ডের বিভিন্ন আকৃতির স্লটের মধ্যে কার্ডগুলো বসাতে হয়। অতিরিক্ত সুবিধা প্রদানকারী উক্ত কার্ডসমূহ বিভিন্ন বিটের হয়ে থাকে। নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড পিসি এবং ডেটা কেবলের মধ্যে সিগন্যাল আদান-প্রদানের কাজটি সমন্বয় করে থাকে।
মডেম (Modem)
Modulation শব্দের ‘Mo’ এবং Demodulation শব্দের ‘Dem’ নিয়ে ‘Modem’ শব্দটি গঠিত হয়েছে। নেটওয়ার্কিং-এ তথ্যাবলি আদান–প্রদানের ক্ষেত্রে মডেম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যখন কম্পিউটার হতে ইনফরমেশন মডেমে যায় তখন এটি ইনফরমেশনকে ডিজিটাল বিট হতে এনালগ সিগন্যালে রূপান্তরিত করে।
আর যখন রূপান্তরিত এনালগ সিগন্যাল অপর প্রান্তে অন্য কম্পিউটারে যুক্ত মডেমে পৌঁছে তখন তা আবার এনালগ সিগন্যাল কম্পিউটারের বোধগম্য ডিজিটাল বিটসে রূপান্তর করে। এভাবেই দুটি কম্পিউটারের মধ্যে মডেমের মাধ্যমে কমিউনিকেশন বা যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। মডেম, টেলিফোন লাইন, Co-axial ক্যাবল, ফাইবার অপটিক ক্যাবল ইত্যাদির মাধ্যমে ডেটা আদান-প্রদান করতে পারে।
মডেম দুই প্রকার। যথা-
ইন্টারনাল মডেম (Internal Modem): ইন্টারনাল মডেম মূলত একটি কার্ড বিশেষ। এই কার্ড পিসির মাদারবোর্ডের এক্সপানশান স্লটে লাগানো থাকে।
এক্সটারনাল মডেম (External Modem): যে মডেম ক্যাবলের সাহায্যে কম্পিউটারের কমিউনিকেশন পোর্টের সাথে বাইরের দিক থেকে সংযুক্ত করা হয় তাকে এক্সটারনাল মডেম বলা হয়।
হাব (Hub)
হাব হলো নেটওয়ার্কের ডিভাইসসমূহের জন্য একটি সাধারণ কানেকশন পয়েন্ট। ল্যানের সেগমেন্টগুলো কানেক্ট করার জন্য সাধারণভাবে হাব ব্যবহৃত হয়। হাবের মধ্যে অনেকগুলো পোর্ট থাকে। ডেটা প্যাকেট একটি পোর্টে আসলে এটি অন্য পোর্টে কপি হয় যাতে ল্যানের সব সেগমেন্ট সব প্যাকেটসমূহ দেখতে পারে। স্টার টপোলজির ক্ষেত্রে হাব হচ্ছে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকারী ডিভাইস। হাবের দাম তুলনামূলকভাবে কম।
হাবের সুবিধা (Advantages of Hub)
- হাবের দাম কম
- বিভিন্ন মিডিয়ামকে সংযুক্ত করতে পারে
হাবের অসুবিধা (Disadvantages of Hub)
- নেটওয়ার্ক ট্রাফিক বৃদ্ধি পায়
- ডেটা আদান প্রদানে বাধার সম্ভাবনা থাকে
- ডেটা ফিল্টারিং সম্ভব হয় না
সুইচ (Switch)
এক ধরনের নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটি ডিভাইস যা মিডিয়া সেগমেন্টগুলোকে একটি কেন্দ্রীয় অবস্থানে এনে একত্রিত করে। হাবের সাথে সুইচের পার্থক্য হলো সুইচ প্রেরক প্রান্ত থেকে প্রাপ্ত ডেটা প্রাপক কম্পিউটারের সুনির্দিষ্ট পোর্টটিতে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু হাব ঐ ডেটা সিগনাল প্রাপক কম্পিউটারের সবগুলো পোর্টেই পাঠায়।
সুইচের সুবিধা (Advantages of Switch)
- ডেটা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে বাধার সম্ভাবনা কমায়
- ভার্চুয়াল LAN ব্যবহার করে ব্রডকাস্ট নিয়ন্ত্রণ করা যায়
সুইচের অসুবিধা (Disadvantages of Switch)
- হাবের তুলনায় মূল্য কিছুটা বেশি
- ডেটা ফিল্টারিং সম্ভব নয়
- কনফিগারেশন তুলনামূলকভাবে জটিল
রাউটার (Router)
এটি একটি বুদ্ধিমান ইন্টারনেটওয়ার্ক কানেকটিভিটি ডিভাইস যা লজিক্যাল এবং ফিজিক্যাল এড্রেস ব্যবহার করে দুই বা ততোধিক নেটওয়ার্ক সেগমেন্টের মধ্যে ডেটা আদান-প্রদানের ব্যবস্থা করে। রাউটার উৎস কম্পিউটার থেকে গন্তব্য কম্পিউটারে ডেটা প্যাকেট (ডেটার সমষ্টি) পৌঁছে দেয়। রাউটার বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্ক যেমন ইথারনেট, টোকেন, রিং ইত্যাদিকে সংযুক্ত করতে পারে।
রাউটারের সুবিধা (Advantages of Router)
- ডেটা ট্রান্সমিশনের ক্ষেত্রে বাধার সম্ভাবনা কমায়
- ডেটা ফিল্টারিং সম্ভব হয়
- বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্ক যেমন ইথারনেট, টোকেন, রিং ইত্যাদিকে সংযুক্ত করতে পারে
রাউটারের অসুবিধা (Disadvantages of Router)
- রাউটারের দাম বেশি
- রাউটার একই প্রোটকল নেটওয়ার্ক ছাড়া সংযুক্ত হতে পারে না
- কনফিগারেশন তুলনামূলক জটিল
- ধীরগতিসম্পন্ন
গেটওয়ে (Gateway)
গেটওয়ে একটি নেটওয়ার্ককে আরেকটি নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করে। এটি একটি নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটি ডিভাইস যা বিভিন্ন কমিউনিকেশন প্রোটোকল ট্রান্সলেট করে অর্থাৎ এক প্রোটোকলকে অন্য আরেক ধরনের প্রোটোকলের সাথে সংযুক্ত করে।
গেটওয়ের সুবিধা (Advantages of Gateway)
- ডেটা ট্রান্সমিশনের ক্ষেত্রে বাধার সম্ভাবনা কম
- বিভিন্ন প্রটোকলবিশিষ্ট নেটওয়ার্ক সংযুক্ত করতে পারে
গেটওয়ের অসুবিধা (Disadvantages of Gateway)
- এটি ধীরগতিসম্পন্ন
- কনফিগারেশন করা তুলনামূলক জটিল
- অন্যান্য ডিভাইসের চেয়ে ব্যয়বহুল
রিপিটার (Repeater)
তথ্য যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত এক ধরনের ডিভাইস বিশেষ। কম্পিউটার নেটওয়ার্কে ক্যাবলের মাধমে যুক্ত কম্পিউটারটি যদি দূরে হয় তাহলে এর মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ডেটা সিগনাল দুর্বল হয়ে যায়। এ দুর্বল সংকেতকে সবল করা এবং গন্তব্য স্থানের দিকে প্রেরণ করার জন্য রিপিটার ব্যবহার করা হয়। নেটওয়ার্ক সংযোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কম্পিউটারের মধ্যে দূরত্ব বাড়ানোর জন্য রিপিটার ব্যবহার করা হয়।
রিপিটারের সুবিধা (Advantages of Repeater)
- নেটওয়ার্ক সংযোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কম্পিউটারের মধ্যে দূরত্ব বাড়ানোর জন্য রিপিটার ব্যবহার করা হয়
- নেটওয়ার্ক ট্রাফিক বৃদ্ধি না করে ডেটা অ্যামপ্লিফাই বা শক্তিশালী করে সামনের দিকে প্রেরণ করা যায়
রিপিটারের অসুবিধা (Disdvantages of Repeater)
- সীমিত সংখ্যক কম্পিউটার যুক্ত করতে পারে
- ডেটা ট্রান্সমিশনের ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখিন হতে হয়
ব্রিজ (Bridge)
এক ধরনের নেটওয়ার্ক ডিভাইস, যা একাধিক নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করে থাকে। এর সাহায্যে ভিন্ন মাধ্যম অথবা ভিন্ন কাঠামো বিশিষ্ট একাধিক নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করা যায়। কিন্তু এর সাহায্যে ভিন্ন প্রটোকল বিশিষ্ট একাধিক নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করা যায় না।
ব্রিজকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
লোকাল ব্রিজ (Local Bridge): এটি সরাসরি LAN এর সাথে যুক্ত থাকে।
রিমোট ব্রিজ (Remote Bridge): ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন দু’টি অবস্থানের দুটি ল্যান সেগমেন্টকে সংযুক্ত করে।
ওয়্যারলেস ব্রিজ (Wireless Bridge): একাধিক LAN যুক্ত করা অথবা LAN এর দূরবর্তী স্টেশনকে সংযুক্ত করার জন্য ওয়ারলেস ব্রিজ ব্যবহৃত হতে পারে।