মোবাইলে ইন্টারনেট: আধুনিক যুগের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি
মোবাইলে ইন্টারনেট: GPRS, EDGE, WAP ইত্যাদি প্রযুক্তির মাধ্যমে এখন মোবাইল ফোনেও ইন্টারনেট ব্যবহার করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এখন মোবাইলে ফোনেই ই-মেইল আদান-প্রদান, ওয়েব ব্রাউজিং, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং, টিভি দেখা ইত্যাদিসহ বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি এক নিমিষেই পাওয়া সম্ভব হচ্ছে।
মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হলে উপযুক্ত হ্যান্ডসেট ব্যবহার করতে হয়। কারণ সকল ধরনের হ্যান্ডসেট ইন্টারনেট ব্যবহারে সক্ষম হয় না। এক্ষেত্রে খানিকটা উঁচু মানের হ্যান্ডসেট ও স্মার্টফোন ব্যবহার করে ইন্টারনেট অ্যাকসেস করা যায়। বর্তমানে বাজারে স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের উপযোগী বিভিন্ন ধরনের মোবাইল ফোন কিনতে পাওয়া যায়।
সূচিপত্র-
মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা (Advantages of Mobile Internet)
১. সাশ্রয়ী বিভিন্ন ইন্টারনেট সার্ভিস নিয়ে ইচ্ছে অনুযায়ী ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়।
২. কভারেজের আওতাভুক্ত যেকোনো স্থান থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়।
৩. সার্বক্ষণিক ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত থাকা যায়।
৪. যখন তখন যেকোন স্থান থেকে ইমেইল চেক ও প্রেরণ করা যায়।
৫. দূর দূরান্তে অবস্থানরত বন্ধু-বান্ধবদের সাথে চ্যাটিং করা যায়।
৬. বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে মোবাইলে ভয়েস কল করা যায়।
৭. থ্রিজি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভিডিও কল করা যায়।
৮. স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে টেলিভিশন দেখা যায়।
৯. উন্নতমানের মোবাইল ফোনে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (GPS) ব্যবহার করা যায়।
১০. দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় নানা ধরনের অ্যাপস ডাউনলোড করে স্মার্টফোনে সেগুলো ব্যবহার করা যায়।
১১. ইন্টারনেটে সার্চ করে প্রয়োজনীয় নানা তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে সংগ্রহ করা যায়।
১২. ওয়ারলেস বা ডেটা ক্যাবলের সাহায্যে মোবাইল ফোনকে কম্পিউটারের সাথে যুক্ত হওয়া যায়।
১৩. বিভিন্ন সামাজিক নেটওয়ার্কিং ও ভিডিও শেয়ারিং সাইট যেমন- ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়।
১৪. স্মার্টফোনগুলোর মাধ্যমে বিনামূল্যের ও ওয়াইফাই হটস্পটগুলোতে ইন্টারনেট অ্যাকসেস করা যায়।
মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারের অসুবিধা (Disadvantages of Mobile Internet)
১. শুধুমাত্র বিশেষ পর্যায়ের হ্যান্ডসেটগুলোতেই ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাওয়া যায়।
২. স্মার্টফোনগুলো ছাড়া অন্যান্য মোবাইল ফোনগুলোতে ইন্টারনেট ব্যবহার করা অনেকটাই ঝামেলাপূর্ণ।
৩. মোবাইলের স্ক্রিনের সাইজ ছোট হওয়ায় ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে টেক্সট ও গ্রাফিক্স পড়তে সমস্যা হয়।
৪. ওয়েব সাইট ব্রাউজের সময় পুরো পেইজটি একসাথে দেখা সম্ভব হয় না। ব্যবহারকারীকে স্ক্রল করে পেইজ ভিজিট করতে হয় যা বিরক্তির কারণ। আধুনিক টাচস্ক্রিনের মোবাইলে এই ঝামেলা অনেকটাই দূর হয়েছে।
৫. লো কনফিগারেশনের মোবাইল ফোনগুলো ফ্ল্যাশ ও অন্যান্য ভারী কনটেন্টগুলোকে লোড করতে পারে না।
৬. মেসেজ বা ই-মেইল টাইপ করতে বেশি সময়ের প্রয়োজন পড়ে।
৭. ওয়েব সাইটে থাকা পিডিএফ, ভিডিও ইত্যাদি ফাইলগুলো খোলা ও দেখার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে থাকে। স্মার্টফোনগুলোর ক্ষেত্রে এই সমস্যা কম হয়ে থাকে।
৮. সব হ্যান্ডসেট সকল ধরনের ফরমেটকে সমর্থন করে না।
৯. ইন্টারনেটের স্পিড কম হলে পেইজ লোড হতে দেরি হয় যা সময় অপচয়ী ও বিরক্তির কারণ হয়।
১০. ইন্টারনেটের খরচ বেশি হয়ে থাকে।
জিপিআরএস (GPRS)
জেনারেল প্যাকেট রেডিও সার্ভিসেস বা জিপিআরএস (General Packet Radio Service- GPRS) হলো একটি প্যাকেট ওরিয়েন্টেড মোবাইল ডেটা সার্ভিস যা সাধারণত ইজি সেলুলার মোবাইল কম্যুনিকেশন সিস্টেমের ব্যবহারকারীদের জন্য পাওয়া যায়। জিপিআরএস এর মাধ্যমে মোবাইল টেলিফোন নেটওয়ার্ক জুড়ে তথ্য আদান প্রদান করা যায়। এর মাধ্যমে মোবাইল নেটওয়ার্কে অনেক বেশি ব্যান্ডউইডথ পাওয়া যায়।
জিপিআরএস এর সুবিধা (Advantages of GPRS)
- নেট সার্ফিং, ই-মেইল গ্রহণ ও প্রেরণ করা যায়
- দ্রুতগতিতে টেক্সট ডকুমেন্ট, স্প্রেডশিট, ফটোগ্রাফ ও ইলাস্ট্রেশন, স্থির ও চলমান ইমেজ, অডিও, করপোরেট ই-মেইল প্রভৃতি ট্রান্সমিশন করা যায়
- Point-to-Point (P2P) সুবিধা
- Point-to-Multiple (P2M) সুবিধা গ্রহণ
- মোবাইল চ্যাটিং করা যায়
- অনলাইনে গেম খেলা যায়
- সার্বক্ষণিক ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত থাকা যায়
জিপিআরএস এর বৈশিষ্ট্য (Features of GPRS)
- 2G সিস্টেমে GPRS প্রতি সেকেন্ডে 56-114 kbit ডেটা রেট প্রদান করে
- গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য গ্রহণ ও প্রেরণের ক্ষেত্রে GPRS বিশেষ সুযোগ দিয়ে থাকে
- ওয়েব ব্রাউজিং থেকে চ্যাট পর্যন্ত ডেস্কটপে যেসব অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা হয় তার সবগুলোর সাথেই GPRS করা কাজ করে
- এমএমএস, সেলুলারের মাধ্যমে পুশ টু টক, ইন্সট্যান্ট মেসেজিং, ওয়্যারলেস অ্যাপ্লিকেশন প্রটোকল (WAP), পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট (P2P) সার্ভিস প্রভৃতি সেবা GPRS এর মাধ্যমে পাওয়া যায়
- জিপিআরএস এর মাধ্যমে এসএমএস পাঠানোর ক্ষেত্রে তা প্রতি মিনিটে ৩০টি এসএমএস পাঠাতে সক্ষম
- GPRS কে অনেক সময় 2.5G নামেও ডাকা হয় যা কিনা দ্বিতীয় এবং তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল টেলিফোনি প্রযুক্তির মাঝামাঝি একটি প্রযুক্তি
জিপিআরএস এর অসুবিধা/সীমাবদ্ধতা (Limitations of GPRS)
- কেবল সীমিত রেডিও রিসোর্স পাওয়া যায়
- জিপিআরএস এর মাধ্যমে সর্বোচ্চ 171.2 kbps গতি পাওয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবিকভাবে এই গতি পাওয়া যায় না
- এটি এখনও ধীর গতির একটি প্রযুক্তি হিসেবে বিবেচিত
ইডিজিই (EDGE)
জিপিআরএস এর চাইতে উন্নত মোবাইল ফোন প্রযুক্তি হলো ইডিজিই। EDGE এর পুরো অর্থ হলো Enhanced Data rates for GSM Evolution aft Enhanced GPRS (EGPRS) IMT Single Carrier (IMT-SC) বা, Enhanced Data rates for Global Evolution নামেও পরিচিত। স্ট্যান্ডার্ড জিএসএম নেটওয়ার্কে উন্নত ডেটা ট্রান্সমিশন রেট প্রদান করে EDGE। ২০০৩ সালের শুরুতে জিএসএম নেটওয়ার্কে EDGE কে চালু করা হয়।
ইডিজিই এর বৈশিষ্ট্য (Features of EDGE)
- এটি স্ট্যান্ডার্ড GPRS এর চাইতে চারগুণ বেশি ট্রাফিক বহন করতে পারে
- থ্রিজি নেটওয়ার্কের জন্য ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন্স ইউনিয়ন এর চাহিদাগুলো EDGE পূরণ করেছে
- ৯টি মডুলেশন ও কোডিং স্কিম ব্যবহার করে
- বৃহৎ চিপ ভেন্ডরদের দ্বারা GSM এবং WCDMA/HSPA উভয়টির জন্যই বর্তমানে EDGE সমর্থনকৃত
ইডিজিই এর সুবিধা (Advantages of EDGE)
- যেকোনো প্যাকেট সুইচড অ্যাপ্লিকেশনের জন্য যেমন- ইন্টারনেট সংযোগের জন্য EDGE ব্যবহার করা যায়
- ভিডিও সার্ভিস এবং মাল্টিমিডিয়া সুবিধাদি প্রদানের মতো হাই-স্পিড ডেটা অ্যাপ্লিকেশনের ক্ষেত্রে EDGE ডেটার ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে
- EDGE এর মাধ্যমে মোবাইল ফোনে বা কম্পিউটারে দ্রুতগতিতে নেট সার্ফিং, ই-মেইল গ্রহণ ও প্রেরণ করা যায়
- দ্রুতগতিতে টেক্সট ডকুমেন্ট, স্প্রেডশিট, ফটোগ্রাফ ও ইলাস্ট্রেশন, স্থির ও চলমান ইমেজ, অডিও, করপোরেট ই-মেইল প্রভৃতি ট্রান্সমিশন করা যায়
- মোবাইল চ্যাটিং করা যায় এবং অনলাইনে গেম খেলা যায়
- মোবাইল ডিভাইসে স্ট্রিমিং অডিও এবং ভিড়িও উপভোগ করা যায়।
মোবাইলে ইন্টারনেট নিয়ে এই ছিল আজকের আমাদের আর্টিকেল। এটা নিয়ে আরো বিস্তারিত কিছু বিষয় অন্য পোস্টে দেয়া আছে, প্রয়োজনে দেখতে পারবেন।