ওয়াই-ফাই: আধুনিক জীবন যাপনের জন্য অপরিহার্য প্রযুক্তি

ওয়াই-ফাই: আধুনিক জীবন যাপনের জন্য অপরিহার্য প্রযুক্তি

ওয়াই-ফাই: কম্পিউটার/ডিজিটাল বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিগুলোকে তারবিহীন উপায়ে ইন্টারনেটে সংযুক্ত করার একটি প্রযুক্তি হলো ওয়াই-ফাই Wi-Fi (Wireless Fidelity)। ওয়াই-ফাই হলো জনপ্রিয় একটি ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কিং প্রযুক্তি যেটি তারবিহীন উচ্চগতির ইন্টারনেট ও নেটওয়ার্ক সংযোগে বেতার তরঙ্গকে ব্যবহার করে থাকে।

ওয়াই-ফাই এ্যানাবল্ড ডিভাইস যেমন- ল্যাপটপ, ভিডিও গেম কনসোল, স্মার্টফোন কিংবা ডিজিটাল অডিও পেয়ার প্রভৃতি একটি ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক অ্যাকসেস পয়েন্টের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হতে পারে। ইন্টারনেট একসেসের জন্য Wi-Fi নেটওয়ার্কভুক্ত এলাকাকে Hotspot (নিচে আলোচনা করা হয়েছে) বলা হয়। এর ডেটা কমিউনিকেশন গতি খুবই কম এবং সিকিউরিটি ব্যবস্থাও দুর্বল।

ওয়াই-ফাই এর বৈশিষ্ট্য/সুবিধা

ওয়াই–ফাই এর কভারেজ সীমিত পরিসর থেকে নিয়ে বিস্তৃত পরিসরেও পাওয়া সম্ভব।

ওয়াই-ফাই এর ব্যান্ডউইথ সাধারণত 10 Mbps থেকে 50 Mbps পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ওয়াই-ফাই LAN-এর চেয়ে সস্তা এবং কোন কোন ক্ষেত্রে বিনামূল্যে সেবা দিয়ে থাকে।

যে কোন মানের Wi-Fi বিশ্বের যে কোন জায়গায় কাজ করবে।

Wi-Fi LAN-এর সাথে সংযুক্ত হবার জন্য কম্পিউটারকে একটি ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কন্ট্রোলার সংবলিত হতে হয়।

রাউটারের সাথে একটি ডিজিটাল সাবস্ক্রাইবার লাইন মডেম এবং একটি ওয়াই–ফাই অ্যাকসেস পয়েন্টকে যুক্ত করায় এর আওতার মধ্যে থাকা সকল ডিভাইসগুলোতে ইন্টারনেট অ্যাকসেস সুবিধা পায়।

WiFi এবং WiBro (Wireless Broadband) একটি পোর্টেবল ওয়াই-ফাই রাউটার এর মাধ্যমে খুব সহজেই নিজস্ব ওয়াই–ফাই হটস্পট তৈরি করে যেটি সেলুলার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইন্টারনেটে সংযুক্ত হয়।

আইফোন, অ্যানড্রয়েড এবং সিম্বিয়ান অপারেটিং সিস্টেম চালিত ফোনগুলো ওয়্যারলেস সংযোগ তৈরি করতে পারে।

ক্লায়েন্ট-টু-ক্লায়েন্ট সংযোগগুলোর জন্য রাউটার ছাড়াও এড-হক মোডে ওয়াই-ফাই ডিভাইসগুলোকে সংযুক্ত করা যায়।

ওয়াই-ফাই এর কিছু অসুবিধা

  • ডেটা স্থানান্তর বেশ ধীরগতিসম্পন্ন।
  • নির্দিষ্ট এলাকা ছাড়া কভারেজ পাওয়া কঠিন।
  • নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকে ।

ওয়াই-ফাই এর ব্যবহারসমূহ

১। বাসাবাড়ি এবং অফিস-আদালত ছাড়াও ওয়াই-ফাই হটস্পটসমূহের পাবলিক স্পেসেও সেবা প্রদান করে।

২। ওয়াই-ফাই হটস্পটগুলো বিনামূল্যে কিংবা বাণিজ্যিকভাবে স্থাপিত হয়ে থাকে। বিমানবন্দর, হোটেল, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি স্থানে বিনামূল্যে ওয়াই-ফাই এর সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে।

৩। বিশ্বের বহু শহরেই আজ সিটি-ওয়াইড ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক রয়েছে।

৪। বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ওয়াই-ফাই এর আওতায় আনা হচ্ছে যার ফলে শিক্ষার্থীরা খুব সহজে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বসেই তাদের ল্যাপটপ বা স্মার্টফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে।

ওয়াই-ফাই হটস্পট

ওয়াইফাই হটস্পট হলো এক্সেসেবল ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কের সাপোর্ট সমৃদ্ধ কোন একটি এলাকা যেখান থেকে সংশ্লিষ্ট ডিভাইসের সাহায্যে খুব সহজেই ইন্টারনেট এক্সেস করা যায়। এই ধরনের ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক সিস্টেম বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাবলিক প্লেসগুলোতে ব্যবহৃত হয় যেমন এয়ারপোর্ট কিংবা কফিশপ প্রভৃতি। এদের কোন কোনটি ফ্রি ব্যবহার করা যায় আবার কোন কোনটি ব্যবহারের জন্য অর্থ প্রদানের প্রয়োজন পড়ে।

কিন্তু যে কোন ক্ষেত্রেই এটি ব্যবহার করা খুবই সহজ এবং কার্যকর একটি পদ্ধতি। এমনকি যে কেউ তার সেলফোন কিংবা এমন কোন এক্সটার্নাল ডিভাইস যা সেলুলার নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হতে পারে তা ব্যবহার করে নিজের মোবাইলেও এরকম মোবাইল হটস্পট তৈরি করতে পারে এবং নিজের বাড়িতেও খুব সহজেই ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক সেটআপ করতে পারে ।

কেউ যদি পাবলিক ওয়াই–ফাই হটস্পট কিংবা হোম বেজ ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের সুবিধা গ্রহণ করতে চায় এক্ষেত্রে প্রথমেই তাকে নিশ্চিত হতে হবে যে তার কম্পিউটারটিতে এর জন্য সঠিক ডিভাইস এবং সিস্টেম সাপোর্ট রয়েছে কি’না। বর্তমান কালের নতুন ল্যাপটপ বা ডেস্কটপগুলোতে সাধারণত বিল্ট ইন ওয়্যারলেস ট্রান্সমিটার যুক্ত থাকে এবং প্রায় সকল মোবাইল ডিভাইসগুলোই ওয়াই ফাই সাপোর্টেড হয়ে থাকে।

তবে যদি কোন কম্পিউটারে এই ওয়্যারলেস ট্রান্সমিটারের সুবিধাটি না থাকে তবে তার জন্য পৃথকভাবে ওয়্যারলেস এডাপ্টার কিনে নেয়া যেতে পারে। ল্যাপটপ বা পিসিতে পিসিআই কার্ড বা ইউএসবি পোর্টের মাধ্যমে সংযুক্ত করে খুব সহজেই ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সুবিধা গ্রহণ করা যাবে।

কোন কম্পিউটারে একবার ওয়্যারলেস এ্যাডাপ্টারটি সংযুক্ত করা এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় ড্রাইভার ইনস্টল করার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এটি যে কোন এক্সিস্টিং ওয়্যারলেস বা ওয়াই ফাই নেটওয়ার্ককে সনাক্ত করে নেয়। অর্থাৎ এডাপ্টার সমৃদ্ধ কম্পিউটারটি যদি কোন ওয়াই ফাই হটস্পট জোনের ভেতরে থাকে তবে পিসিটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে জানিয়ে দেবে যে এর ইউজার একটি ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কের ভেতরে রয়েছে এবং সে সেই নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে ইচ্ছুক কিনা তা জানতে চাইবে।

ওয়াই-ফাই

ওয়াই-ফাই হটস্পট তৈরি করার নিয়ম

ওয়াই-ফাই ডিভাইস আছে এমন ল্যাপটপ বা ডেক্সটপকে ওয়াই-ফাই হটস্পট বানানো যায় খুব সহজেই। ফলে ল্যাপটপ বা ডেক্সটপের ইন্টারনেট সংযোগ ওয়াই-ফাই এর মাধ্যমে অন্যান্য ওয়াই-ফাই আছে এমন ডিভাইসে ব্যবহার করা যায়। যেমনঃ ল্যাপটপে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হচ্ছে।

এখন চাইলে ওয়াই-ফাই আছে এমন মোবাইলে, ডেক্সটপে, ট্যাবলেটে বা অনান্য ডিভাইসে সহজেই ল্যাপটপের ইন্টারনেট শেয়ার করা যাবে। এর জন্য বিভিন্ন টুলস পাওয়া যায়। এর মধ্যে ভার্চুয়াল রাউটার প্লাস অন্যতম এটি ফ্রিওয়্যার এবং পোর্টেবল।

সফটওয়্যারটি পোর্টেবল বিধায় ইনস্টল করার প্রয়োজন নেই। ১৫০ কিলোবাইটের এই সফটওয়্যারটি উইন্ডোজ ৭, উইন্ডোজ ৮, উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮ এবং উইন্ডোজ সার্ভার ২০১২ অপারেটিং সিস্টেমে কাজ করবে।

১. প্রথমে সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করে আনজিপ করে চালু করতে হবে।

২. এবার VirtualRouterPlus.exe চালু করে নেটওয়ার্কের নাম, পাসওয়ার্ড এবং কোন ল্যানের ইন্টারনেট শেয়ার হবে তা নির্ধারণ করে Start Virtual Router Plus বাটনে ক্লিক করতে হবে।

৩. অন্য ওয়াই-ফাই ডিভাইস থেকে ওয়াই–ফাই সার্চ করে নেটওয়ার্কের নাম দেখা যাবে, এখন পাসওয়ার্ড দিয়ে কানেক্ট করে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাবে।

এই ছিল ওয়াই-ফাই সম্পর্কে যাবতীয় সকল তথ্য, আরও কোন তথ্য জানার থাকলে আমাদের কমেন্টের মধ্যমে জানাতে পারেন।

বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন:

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *