ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম

ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম: ধারণা, প্রকারভেদ ও গুরত্ব

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় হচ্ছে ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। প্রথমে আমরা ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এর ধারণা নিয়ে আলোচনা করব, তারপর এর প্রকারভেদ, প্রাথমিক কাজসমূহ, সুবিধা-অসুবিধা এবং ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাহলে শুরু করা যাক-

ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্টের ধারণা

ডেটা (Data): Data শব্দটি ল্যাটিন শব্দ Datum-এর বহুবচন। Datum অর্থ হচ্ছে তথ্যের উপাদান (an item of information)। তথ্যের অন্তর্ভুক্ত ক্ষুদ্রতর অংশসমূহ হচ্ছে ডেটা বা উপাত্ত। প্রক্রিয়াকরণ করে তথ্যে পরিণত করার জন্য কম্পিউটারে ডেটা ইনপুট করা হয়। কম্পিউটার মূলত ডেটাকে প্রসেস করে তথ্য (ইনফরমেশন)-এ রূপান্তরিত করে।

যেমন- কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের পে-রোল তৈরি করার জন্য তাদের নাম, পদবি, কোড নং, মূল বেতন ইত্যাদি হলো ডেটা। ডেটা বিভিন্ন ভাষার প্রতীক, যেমন- অ, ক, A, B, f, ১, ৩ ইত্যাদি অথবা কোনো ছবি বা অন্য কিছু হতে পারে। এ প্রতীকগুলোকে কম্পিউটারে বোঝার উপযোগী করার জন্য কম্পিউটারের ভাষায় রূপান্তরের ব্যবস্থা থাকে।

তথ্য (Information): সরবরাহকৃত ডেটা থেকে প্রক্রিয়াকরণের পর নির্দিষ্ট চাহিদার প্রেক্ষিতে সুশৃঙ্খল যে ফলাফল পাওয়া যায়, তাকেই বলা হয় তথ্য বা ইনফরমেশন। তথ্য বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন-নম্বরভিত্তিক ফলাফল, ব্যবসায়িক রিপোর্ট, বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল ইত্যাদি। ডেটা একটি একক ধারণা এবং তথ্য সমন্বিত ধারণা।

ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ধারণা

ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (DBMS)

ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ডিবিএমএস) হচ্ছে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত ডেটা/তথ্য/রেকর্ড একসেস, সংরক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রোগ্রামের সমষ্টি। DBMS ব্যবহার করে ডেটাবেজ রক্ষণাবেক্ষণ, নিরাপত্তা ও আধুনিকীকরণের কাজ করা হয়। তথ্য ব্যবস্থাপনাকে সুন্দর ও কার্যোপযোগী করে তুলতে পারে DBMS। DBMS ব্যবহারকারী ও ডেটাবেজের মধ্যে সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করে।

DBMS-এর প্রধান তিনটি কাজ হচ্ছে-

  • ডেটাবেজ তৈরি
  • ডেটাবেজ ইন্টারোগেশন ও
  • ডেটাবেজ রক্ষণাবেক্ষণ।

DBMS এর প্রকারভেদ

১. মাইক্রোসফট অ্যাকসেস (Micorsoft Access)
২. ওরাকল (Oracle)
৩. মাইএসকিউএল (MySQL)
৪. মাইক্রোসফট এসকিউএল সার্ভার (Microsoft SQL Server)
৫. এসকিউলাইট (SQLite)
৬. পোস্টগ্রি এসকিউএল (Postgre SQL) ইত্যাদি।

DBMS এর প্রাথমিক কাজসমূহ

ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের প্রাথমিক কাজগুলো হলো-

১. ডেটাবেজ তৈরি করা, ডেটা এন্ট্রি করা এবং ডেটা সংরক্ষণ করা

২. ডেটার ভুল অনুসন্ধান ও সংশোধন করা

৩. অপ্রয়োজনীয় ডেটা/রেকর্ড ডিলিট করা

৪. নির্দিষ্ট ডেটা/রেকর্ড সার্চিং বা অনুসন্ধান এবং কুয়েরি করা ৫. রিপোর্ট তৈরি ও প্রিন্ট করা

৬. কোন ফিল্ডের ভিত্তিতে Ascending/Descending অর্ডারে সাজানো

৭. ডেটা ডুপ্লিকেশন কমানো

৮. প্রয়োজনে সম্পূর্ণ ডেটাবেজ বা ডেটাবেজের অংশবিশেষ প্রিন্ট করা

৯. ডেটাবেজ আপডেট করা

১০. ডেটার নিরাপত্তা বিধান করা এবং ব্যবহারকারী নিয়ন্ত্রণ করা

১১. ডেটার ব্যাকআপ ও রিকভারি করা।

DBMS-এর সুবিধা

১. ডেটার বাহুল্য (Redundancy) কমায়।

২. ভুল ডেটা এন্ট্রি নিয়ন্ত্রণ করে।

৩. সহজে ও দ্রুত নির্দিষ্ট ডেটা অনুসন্ধান করা যায়।

৪. ডেটা শেয়ার করা যায়।

৫. ডেটার সঠিকতার নিশ্চয়তা প্রদান করে।

৬. চাহিদামতো বিভিন্ন ধরনের রিপোর্ট তৈরি করা যায়।

৭. অননুমোদিত ব্যবহার রোধ করাসহ ডেটার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

৮. উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা খরচ কমায়।

৯. ব্যাকআপ ও রিকভার সার্ভিস দেয়।

DBMS-এর অসুবিধা

১. অভিজ্ঞ জনশক্তির প্রয়োজন।

২. পদ্ধতিগত জটিলতা থাকতে পারে।

৩. অধিক ব্যয়সাপেক্ষ ।

৪. ভুল ডেটা এন্ট্রি সম্পূর্ণ ডেটাবেজকে প্রভাবিত করতে পারে।

৫. অধিক মেমোরির প্রয়োজন হতে পারে

৬. সিস্টেম ফেইল করা অথবা ভাইরাস বা হ্যাকারের আক্রমণে সম্পূর্ণ কার্যক্রম ব্যাহত হয়ে আর্থিক ক্ষতি হতে পারে

ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ব্যবহারের ক্ষেত্রসমূহ

বর্তমানে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে DBMS ব্যবহৃত হচ্ছে। এর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ক্ষেত্র হচ্ছে-

১. তথ্য ব্যবস্থাপনা: ব্যাপক তথ্য নিয়ে কাজ করতে হয় এমন সব সরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন- নির্বাচন কমিশন, পরিসংখ্যান ব্যুরো, শিক্ষা ব্যুরো, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, পর্যটন কর্পোরেশন, কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানসমূহে।

২. ব্যাংকি: ব্যাংকিং সেক্টরের সব ধরনের কার্যক্রম যেমন- ব্যাংকিং লেনদেন, গ্রাহকের বিবরণ, ব্যালেন্স, একাউন্ট স্টেটমেন্ট, ঋণ সংক্রান্ত হিসাব-নিকাশ, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড প্রভৃতি কাজে।

৩. বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান: বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে যেমন- বড় শপিং মলে প্রডাক্ট মজুদ, বিক্রয় এবং গ্রাহকদের তথ্য সংরক্ষণ ও বিল তৈরিকরণে, অনলাইন শপিং সার্ভিসে।

৪. এয়ারলাইন্স: বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত টার্মিনালের সাথে টেলিফোন ও অন্যান্য নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার মাধ্যমে বিমানের রিজার্ভেশন ও সিডিউল তৈরিতে।

৫. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বিবিধ তথ্য যেমন রেজিস্ট্রেশন, ফি কালেকশন, ভর্তি ফরম পূরণ, রুটিন, পরীক্ষার ফলাফলের গ্রেডিং প্রভৃতি কাজে।

৬. টেলিকমিউনিকেশন: টেলিফোন কলের রেকর্ড, মাসিক বিল, প্রি-প্রেইড কলিং গ্রাহকের হিসাব, গ্রাহকের তথ্যাবলি সংরক্ষণে DBMS এর ব্যাপক প্রয়োগ রয়েছে।

৭. তথ্য ব্যবস্থাপনা: বিভিন্ন অর্থলগ্নীকারক ও ব্যবস্থাপনা যেমন- হোল্ডিং, ক্রয়-বিক্রয়, স্টক, শেয়ার বা বার্ষিক আর্থিক বিশ্লেষণ প্রভৃতি কাজে।

৮. উৎপাদন: বিভিন্ন কলকারখানায় উৎপাদন, মজুদ পরিমাণ, চাহিদা, অর্ডার প্রভৃতি হিসাব বিশ্লেষণে।

৯. মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা: কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত নথিপত্র, বেতন-ভাতাদি, ওভারটাইম, আয়কর, বোনাস প্রভৃতি হিসাব প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণে।

১০. ওয়েববেজড সার্ভিস: ওয়েব ব্যবহারকারীদের ফিডব্যাক নেয়া, উত্তর দেয়া এবং রিসোর্স শেয়ারিং করা।

১১. স্বাস্থ্য সেবায়: বড় বড় হাসপাতাল বা ক্লিনিকে রোগীদের তথ্য সংরক্ষণ, ডায়াগনসিস রিপোর্ট, অনলাইন স্বাস্থ্য সেবায়, বায়োমেডিক্যাল গবেষণায়।

এই ছিল আজকের লেখা, পরবর্তী লেখা পড়ার জন্য আমাদের সাথেই থাকুন।

বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন:

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *