ভিডিও এবং টেলিকনফারেন্সিং: আধুনিক যোগাযোগের নতুন দিগন্ত
টেলিকনফারেন্সিং: টেলিফোন সংযোগ ব্যবহার করে কম্পিউটার, টেলিফোন বা মোবাইল, মডেম, অডিও প্রভৃতি যন্ত্রের সাহায্যে দেশ- বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কোনো সভায় অংশগ্রহণ করার পদ্ধতিকে টেলিকনফারেন্সিং বলা হয়।
সূচিপত্র-
টেলিকনফারেন্সিং এর কাজ
এ পদ্ধতিতে শারীরিকভাবে একই স্থানে না এসে ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে একদল লোক ভার্চুয়ালি কোনো সভায় মিলিত হয়ে কার্যবিবরণী, মতামত ও রিপোর্ট পেশ করতে পারে এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
কয়েকজনের একটি ছোট দল অথবা অনেক লোকের বড় দল এ সভায় মিলিত হতে পারে। এর ফলে সময় ও অর্থ উভয়ই সাশ্রয় হয়ে থাকে। টেলিফোন বা মোবাইল সংযোগ ব্যবহার করে কম্পিউটার, অডিও তথা মাইক ও স্পিকার, মডেম এবং প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারের সাহায্যে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান হতে টেলিকনফারেন্সিং-এ অংশগ্রহণ করা যায়।
ছাত্র-শিক্ষক-গবেষক প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ বিশ্বের যে কোনো স্থান থেকে টেলিকনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে সভায় অংশগ্রহণ করে থাকেন। তাৎক্ষণিক যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য এটি একটি বহুল প্রচলিত নিরাপদ পদ্ধতি। টেলিকনফারেন্স কমপিউটারাইজড কনফারেন্স অথবা সিসি নামে পরিচিত। ১৯৭৫ সালে মরি টারফ এ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। প্রেসিডেন্ট নিক্সনের আমলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রশাসকদের মধ্যে টেলিকনফারেন্স ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়।
ভিডিও কনফারেন্সিং (Video Conferencing)
ভিডিও কনফারেন্সিং হলো ইন্টারনেট নির্ভর একটি অত্যাধুনিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা। যে যোগাযোগ ব্যবস্থায় যে কোনো ভৌগোলিক দূরত্বে অবস্থান করে কথা বলার পাশাপাশি ভিডিওর মাধ্যমে পরস্পরকে সরাসরি প্রত্যক্ষ করা যায়, তাকে ভিডিও কনফারেন্সিং বলা হয়।
ভিডিও কনফারেন্সিং-এর জন্য প্রয়োজন কম্পিউটার, ওয়েবক্যাম, ইন্টারনেট কানেকশন এবং স্পিকারসহ প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার (স্কাইপি, ভাইবার, হোয়াটসআপ, ইমো, মেসেঞ্জার ইত্যাদি)। বর্তমানে ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবসায়- বাণিজ্য ছাড়াও শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ভিডিও কনফারেন্সিং পদ্ধতিতে অংশগ্রহণকারীরা অডিও ভিজুয়াল পদ্ধতিতে পদ্ধতিতে সভা করতে পারেন। যোগাযোগের ক্ষেত্রে এটি একটি অতি আধুনিক, দ্রুততম ও কার্যকর প্রযুক্তি হিসেবে বর্তমানে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রায়শই ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অংশে অবস্থিত সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্মেলন কিংবা কোনো সরকারি স্থাপনা উদ্বোধন করেন।
ভিডিও কনফারেন্সিং প্রযুক্তির সুবিধা
যে কোনো ভৌগোলিক দূরত্ব থেকে একাধিক ব্যক্তিদের মধ্যে একেবারে মুখোমুখী সাক্ষাতের ন্যায় বার্তালাপ (লাইভ ভিডিও যোগাযোগ) সম্ভব, যা ব্যক্তির সময় ও ভ্রমণ ব্যয় ব্যাপকভাবে সাশ্রয় করে।
যে কোনো ভৌগোলিক দূরত্বে থেকে যে কোনো সভা, সমাবেশ, সরকারি কর্মকাণ্ড, অফিসিয়াল মিটিং, রাজনৈতিক কর্মসূচিসহ যে কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা বা বক্তব্য প্রদান করা সম্ভব।
প্রত্যন্ত বা দুর্গম এলাকায় অবস্থান করেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসা সেবা, উন্নত শিক্ষাসহ আরও বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করা যায়।
ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা সামাজিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। যে কোনো ভৌগোলিক দূরত্বে থেকে নিজ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিবেশ অবলোকন, কর্মীদের মনিটরিং, জরুরি অফিসিয়াল সাক্ষাৎ-সহ যে কোনো ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা সম্ভব।
জনপ্রিয় ভিডিও কনফারেন্সিং মাধ্যম সমূহ
বর্তমানে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সকল জনপ্রিয় এপ গুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হল-
Zoom (জুম)
জুম হলো বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন ভিডিও মিটিং-এর একটি প্ল্যাটফর্ম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জুম ভিডিও কমিউনিকেশন্স ইঙ্ক. প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তৈরিকৃত এ কমিউনিকেশন সফটওয়্যারটি ক্লাউডভিত্তিক পিয়ার-টু-পিয়ার প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ভিডিও টেলিফোনি ও অনলাইন চ্যাট সার্ভিস প্রদান করে। জুম মূলত ব্যবহৃত হয় ভিডিও কনফারেন্সিং মিটিং, টেলিকম্যুটিং, ডিসটেন্স এডুকেশন বা ই-লার্নিং, ওয়েবিনার ও লাইভ চ্যাটের জন্য।
Google Meet (গুগল মিট)
জিমেইল একাউন্টধারীদের জন্য বিখ্যাত গুগল কর্তৃক একটি ফ্রি ভিডিও কনফারেন্সিং সেবা। এর মাধ্যমে ১০০ জন অংশগ্রহণকারী নিয়ে মিটিং পরিচালনা বা অনলাইন ক্লাস করানো যায়। এতে জুম-এর মতো সময়ের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই।
Skype (স্কাইপি)
এটি ফ্রি ভিওআইপি সফটওয়্যার। এ মেসেঞ্জার সফটওয়্যারটির মাধ্যমে অডিও-ভিডিও চ্যাটিং সুবিধার পাশাপাশি কম্পিউটার থেকে কম্পিউটারে বিনামূল্যে এবং কম্পিউটার থেকে প্রচলিত টেলিফোনে স্বল্পমূল্যে বিশ্বব্যাপী কথা বলা যায়।
Viber (ভাইবার)
ভাইবার হলো জাপানিজ কোম্পানি Rakuten কর্তৃক অপারেটকৃত একটি তাৎক্ষণিক বার্তা প্রেরক ও ভিওআইপি অ্যাপ। ভাইবার এর ব্যবহারকারীকে বিনামূল্যে কথা বলা, এসএমএস আদান-প্রদান, ছবি বা ভিডিও আদান-প্রদান, ভিডিও কলিং, গ্রুপ মেসেজিং, লোকেশন শেয়ার প্রভৃতি সুবিধা প্রদান করে।
WhatsApp (হোয়াটসঅ্যাপ)
হোয়াটসঅ্যাপ স্মার্টফোনের জন্য জনপ্রিয় একটি মেসেঞ্জার। হোয়াটসঅ্যাপ-এর মাধ্যমে চ্যাটসহ, ছবি আদান-প্রদান, ভিডিও ও অডিও বার্তা আদান-প্রদান, ভিডিও ও অডিও কলিং প্রভৃতি করা যায়। হোয়াটসঅ্যাপ কম্পিউটারসহ অ্যাপলের আইওএস, ব্ল্যাকবেরি, অ্যান্ড্রয়েড, সিমবিয়ান ও উইন্ডোজ ফোনে ব্যবহার করা যায়।
Facebook Messenger (ফেসবুক মেসেঞ্জার)
ফেসবুক মেসেঞ্জার (সাধারণভাবে মেসেঞ্জার নামে পরিচিত) হলো একটি জনপ্রিয় মেসেঞ্জার ও প্ল্যাটফরম, যা বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ভিওআইপি সফটওয়্যার হিসেবে পরিচিত। এর মাধ্যমে ইউজারগণ বিশ্বব্যাপী ফ্রি মেসেজিং, ছবি, ভিডিও, স্টিকার, অডিও এবং ফাইলসমূহ বিনিময়, অডিও-ভিডিও কলিং ও চ্যাটিং প্রভৃতি করতে
সক্ষম হয়।
Imo (ইমো)
ইমো হলো বিশ্বের একটি জনপ্রিয় মেসেঞ্জার অ্যাপ, যার মাধ্যমে ইউজারগণ বিশ্বব্যাপী ফ্রি মেসেজিং ও অডিও- ভিডিও কলিং প্রভৃতি করতে সক্ষম হয়। এতে ইউজার অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করার জন্য ব্যবহারকারীর ফোন নম্বরের প্রয়োজন হয়। মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশে কর্মরত আমাদের দেশের প্রবাসীদের কাছে দেশে যোগাযোগের জন্য ইমো অ্যাপটি প্রথম পছন্দ।
এগুলো ছাড়াও আরো বেশ কিছু এপ রয়েছে, আপনার যদি পছন্দের কোন এপ থাকে তাহলে জানাতে পারেন, আমরা পরবর্তী সংস্করণে তা এখানে লিপিবদ্ব করে দিব।