কমিউনিকেশন সিস্টেম

কমিউনিকেশন সিস্টেম এর ধারণা, মূল উপাদান ও কার্যপ্রণালী

এই পোস্টে আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো, তা হচ্ছে কমিউনিকেশন সিস্টেম। আধুনিক টেকনোলজির এই যুগে কমিউনিকেশন সিস্টেম অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে। কমিউনিকেশন সিস্টেম এর ধারণা, এটি কি কি উপাদান দ্বারা গঠিত এবং এর কার্যপ্রণালী সহ সকল বিষয় নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

কমিউনিকেশন সিস্টেমের ধারণা

বিভিন্ন ব্যক্তি বা যন্ত্রের মধ্যে কোনো মাধ্যম দ্বারা তথ্য আদান-প্রদানের প্রক্রিয়াকে কমিউনিকেশন বা যোগাযোগ বলা হয় কমিউনিকেশন হলো মেসেজ প্রেরণ ও গ্রহণের ক্ষমতা। যে ব্যক্তি নিজের চিন্তাভাবনা ও আইডিয়াগুলোকে অন্যদের সাথে শেয়ার করার জন্য তাদের কাছে তথ্যকে পাঠিয়ে দিলেন তিনি হলেন সেন্ডার বা প্রেরণকারী (প্রথম পক্ষ)। যে ব্যক্তি প্রেরণকারীর কাছ থেকে তথ্যটি গ্রহণ করলেন, সে অনুযায়ী সাড়া দিলেন ও ফিডব্যাক পাঠালেন তাকে রিসিভার বা গ্রহণকারী (দ্বিতীয় পক্ষ) বলা হয়।

একটি কমিউনিকেশন সিস্টেমে সাধারণত তিনটি অংশ পাওয়া যায়। এগুলো হলো-

  • ক. প্রেরণকারী বা সেন্ডার (Sender)
  • খ. গ্রহণকারী বা রিসিভার (Receiver)
  • গ. মাধ্যম (Media)

উপরের আলোচনায় প্রেরণকারী এবং গ্রহণকারী সম্পর্কে আমরা জেনেছি। কমিউনিকেশন সিস্টেমের ৩য় অংশ অর্থাৎ মাধ্যম হলো এমন একটি দৃশ্যমান বা অদৃশ্যমান বহনকারী, যা বক্তার মেসেজটি বহন করে নিয়ে গিয়ে প্রেরকের কাছে প্রদান করে। মাধ্যম ব্যতীত কোনো ধরনের কমিউনিকেশন সিস্টেম সম্ভব নয়।

বিভিন্ন ধরনের কমিউনিকেশন সিস্টেম

যোগাযোগের ধরন অনুযায়ী কমিউনিকেশন বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। যেমন-

বায়োলজিক্যাল কমিউনিকেশন বা জৈবিক যোগাযোগ

সকল প্রকার কমিউনিকেশন, যেখানে শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন- মস্তিষ্ক, স্বরযন্ত্র, কান, বাহু, হাত ইত্যাদি ব্যবহার করে মেসেজসমূহকে সঞ্চালন ও গ্রহণ করা হয়।

গ্রাফিক কমিউনিকেশন

সকল ধরনের কমিউনিকেশন, যেখানে লিপি, চিহ্ন বা ছবির মাধ্যমে মেসেজসমূহকে ভিজ্যুয়ালি প্রেরণ ও গ্রহণ করা হয়। হাতে লেখা ডাক বিভাগের মাধ্যমে প্রেরিত চিঠি এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

টেলি-কমিউনিকেশন

দূরবর্তী স্থানে যন্ত্র বা ডিভাইস নির্ভর যোগাযোগের পদ্ধতি। যেমন- টেলিফোন, মোবাইল ফোন, টেলিভিশন, রেডিও ইত্যাদি। যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে কমিউনিকেশন সিস্টেম বলতে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাকেই বোঝানো হয়।

ডেটা কমিউনিকেশনের ধারণা

এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে কিংবা এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে নির্ভরযোগ্যভাবে তথ্য আদান-প্রদান তথা তথ্য বিনিময়কে বলা হয় ডেটা কমিউনিকেশন। কমিউনিকেশনকে কার্যকর করার জন্য ডেটা কমিউনিকেশন বা ডেটা যোগাযোগ করা হয়। আধুনিক ডেটা কমিউনিকেশনের কোনো না কোনো পর্যায়ে সরাসরি কম্পিউটার জড়িত থাকে।

ডেটা কমিউনিকেশনে যোগাযোগ বা কমিউনিকেশন ঘটে ডেটা’র মাধ্যমে এবং এই কমিউনিকেশন সিস্টেম কার্যকর হয় মূলত দুটি অংশে। যথা-

  • ডেটা প্রসেসিং এবং
  • ডেটা ট্রান্সমিশন

ডেটা কমিউনিকেশনের এ দুটি অপারেশনে ব্যবহৃত প্রধান দুটি সিস্টেম হলো কম্পিউটার এবং ডেটা ট্রান্সমিশন সিস্টেম। কম্পিউটারকে বলা হয় ডেটা প্রসেসিং (Data Processing) ডিভাইস। কম্পিউটার কর্তৃক উৎপন্ন বা প্রসেসকৃত ডেটা একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে পৌঁছে যাওয়ার প্রক্রিয়াই হলো ট্রান্সমিশন সিস্টেম। ট্রান্সমিশন সিস্টেমের উপাদানগুলো হচ্ছে মডেম, ট্রান্সমিটার, সুইচ, রিসিভার ইত্যাদি।

একটি ডেটা কমিউনিকেশন সিস্টেম সাধারণত পাঁচটি উপাদান নিয়ে গঠিত হয়। যেমন-

মেসেজ (Message): যা পাঠানো হয়। মেসেজ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন- টেক্সট, ছবি, অডিও/সাউন্ড, ভিডিও ইত্যাদি।

প্রেরক (Sender): প্রেরক হলো এক ধরনের ডিভাইস, যা ডেটা/মেসেজ প্রেরণ করে। বিভিন্ন ধরনের প্রেরক ডিভাইস হতে পারে। যেমন- কম্পিউটার, ওয়ার্কস্টেশন, টেলিফোন সেট ইত্যাদি।

প্রাপক (Receiver): প্রাপক হলো এমন এক ধরনের ডিভাইস, যা বার্তা গ্রহণ করে। বিভিন্ন ধরনের প্রাপক ডিভাইস হতে পারে। যেমন- কম্পিউটার, ওয়ার্কস্টেশন টেলিফোন সেট ইত্যাদি।

মাধ্যম (Medium): মাধ্যম হচ্ছে পাথ (physical or wireless), যার মাধ্যমে প্রেরক ডিভাইস থেকে প্রাপক ডিভাইসে ডেটা পাঠানো হয়। যেমন- টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল, কো-এক্সিয়াল ক্যাবল, ফাইবার অপটিক ক্যাবল বা রেডিও ওয়েভ ইত্যাদি।

প্রোটোকল (Protocol): দুটি কমিউনিকেটিং ডিভাইসের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের সময় পালিত কিছু নিয়মনীতি, যা যোগাযোগের প্রকৃতি নির্ধারণ, বাস্তবায়ন ও সমন্বয় করে, তাকে প্রটোকল বলে।

ডেটা কমিউনিকেশন মডেল এবং তার উপাদান

চিত্রের ডেটা কমিউনিকেশন মডেল-এর চিহ্নিত উপাদানগুলো নিচে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলো ।

উৎস (Source)

যে ডিভাইস হতে ডেটাকে প্রেরণের উদ্দেশ্যে উৎপন্ন বা তৈরি করা হয়, তাকে উৎস বলে। যেমন- টেলিফোন, কম্পিউটার, মাইক্রোফোন, কী-বোর্ড, ক্যামেরা ইত্যাদি।

প্রেরক (Transmitter/Sender)

উৎসে উৎপন্ন ডেটাকে তার গন্তব্যে প্রেরণ করার জন্য যে মাধ্যম দিয়ে ডেটাকে প্রেরণ করা হবে, সেই মাধ্যমের উপযোগী ফর্মে বা সিগন্যালে পরিবর্তিত করার প্রয়োজন হয়। যে সিস্টেম উৎস-এর প্রেরণযোগ্য ডেটা বা ইনফরমেশনকে এনকোড করে, এটি যে মাধ্যম বা চ্যানেল দ্বারা পরিবাহিত হবে তার উপযোগী করে তোলে তাকে প্রেরক বা ট্রান্সমিটার বা সেন্ডার বলা হয়।

এটি ডেটাকে প্রয়োজনে ইলেকট্রিক বা আলোক সংকেতে রূপান্তর করে মিডিয়ামে পাঠায়। যেমন- মডেম, রাউটার, টিভি স্টেশন, রেডিও স্টেশন, টেলিফোন ও মোবাইল ফোন কোম্পানির এক্সচেঞ্জ ইত্যাদি। সিম্পল ডেটা কমিউনিকেশন মডেলে উৎস এবং প্রেরককে একত্রে উৎস বা Source সিস্টেম বলা হয়ে থাকে।

মাধ্যম (Communication Channel)

যার মধ্য দিয়ে ডেটা উৎস হতে গন্তব্যে স্থানান্তরিত হয়, তাকে মাধ্যম বা কমিউনিকেশন চ্যানেল বা ট্রান্সমিশন সিস্টেম বলে । কমিউনিকেশন চ্যানেল বা মাধ্যম মূলত একটি একক ট্রান্সমিশন লাইন বা মিডিয়া, যেটি উৎস থেকে গন্তব্যে ডেটা স্থানান্তরের জন্য উৎস (Source System) ও গন্তব্য (Destination System)-কে সংযুক্ত করে। যেমন- টেলিফোন লাইন, টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল, ফাইবার অপটিক ক্যাবল, রেডিও ওয়েভ, মাইক্রোওয়েভ ইত্যাদি।

প্রাপক (Receiver)

ট্রান্সমিশন সিস্টেমের মধ্য দিয়ে গন্তব্যে আগত ডেটা সরাসরি গন্তব্যের ডিভাইস কর্তৃক গৃহীত হতে পারে না। কেননা ট্রান্সমিশন সিস্টেমের মধ্য দিয়ে পরিবাহিত ডেটা ট্রান্সমিশন সিস্টেমের উপযোগী ফরমেটে বা সিগন্যালে পরিবাহিত হয়। গ্রাহক বা Receiver এই এনকোডেড ডেটাকে গ্রহণ করে গন্তব্যের ডিভাইসের উপযোগী ফর্মে পরিবর্তিত করে তা গন্তব্যের ডিভাইসে ডেলিভারি করে থাকে। যেমন- মডেম, রাউটার, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ইত্যাদি।

গন্তব্য (Destination)

ডেটা কমিউনিকেশন মডেলের অপর প্রান্তে থাকা ডিভাইস, যেটি প্রেরক সিস্টেম থেকে প্রেরিত ডেটা অবিকৃত অবস্থায় গ্রাহকের নিকট থেকে গ্রহণ করে। যেমন- টেলিফোন বা মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, সার্ভার ইত্যাদি। সিম্পল ডেটা কমিউনিকেশন মডেলে গ্রাহক এবং গন্তব্যকে একত্রে গন্তব্য বা Destination সিস্টেম বলা হয়ে থাকে।

কমিউনিকেশন সিস্টেম নিয়ে লেখা আমাদের এই পোস্ট সম্পর্কে কোন প্রশ্ন অথবা মতামত থাকলে জানাতে পারেন নিচের কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে, ধন্যবাদ। ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন:

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *