ভার্চুয়াল রিয়েলিটি: মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে এর প্রভাব
প্রকৃত অর্থে বাস্তব নয় কিন্তু বাস্তবের চেতনা উদ্রেককারী বিজ্ঞাননির্ভর কল্পনাকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা অনুভবে বাস্তবতা কিংবা কল্পবাস্তবতা বলে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি মূলত কম্পিউটার প্রযুক্তি ও সিমুলেশন তত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে ত্রি-মাত্রিক ইমেজ তৈরির মাধ্যমে অতি অসম্ভব কাজও করা সম্ভবপর হয়। কল্পনার পাখায় ভর করে ইচ্ছে করলে চাঁদের মাটিতে হেঁটে আসা, প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরতম অঞ্চলে ঘুরে আসা, মানুষের মস্তিষ্কের নিউরাল সংযোগের উপর দিয়ে হাঁটা কিংবা জুরাসিক পার্কের সেই অতিকায় ডায়নোসরের তাড়াও খাওয়া যায়।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি একটি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ যেখানে ব্যবহারকারী ঐ পরিবেশে মগ্ন হতে, বাস্তবের অনুকরণে সৃষ্ট দৃশ্য উপভোগ করতে, সেই সাথে বাস্তবের ন্যায় শ্রবণানুভূতি এবং দৈহিক ও মানসিক ভাবাবেগ, উত্তেজনা অনুভূতি প্রভৃতির অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন। ব্যবহারকারীকে মাথায় হেড মাউন্টেড ডিসপ্লে (Head Mounted Display-HMD), হাতে একটি ডেটা গ্লোভ (Data Glove) বা একটি পূর্ণাঙ্গ বডি স্যুইট (Body Suit) পরতে হয় এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটি তাকে কোন রকম শারীরিক ঝুঁকি বা বিপদ ছাড়াই বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
সম্প্রতি গুগলও Lively নামে ভার্চুয়াল চ্যাটিং সার্ভিস চালু করেছে যেখানে একটি ভার্চুয়াল কক্ষ বা পরিবেশে যে কেউ তার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে প্রবেশ করতে পারে। সেখানে ইচ্ছেমত বস্তু দিয়ে সাজানো, বন্ধুদের সাথে মারামারি, নাচানাচি, আবেগের গ্রাফিক্যাল প্রকাশ ইত্যাদি সম্ভব।
সূচিপত্র
প্রাত্যহিক জীবনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রভাব
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বিভিন্ন পেশাগত ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের জন্য পেশাজীবীদের বাস্তবসম্মত ও নিরাপদ প্রশিক্ষণে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিশেষ করে চিকিৎসা, গাড়ি বা বিমান চালনা, সামরিক বা যুদ্ধ প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রগুলোতে বিভিন্নভাবে শারীরিক কিংবা রিসোর্সগত যে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে, সেগুলো সহজেই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ নেয়ার মাধ্যমে সম্পূর্ণ নিরাপদ করে তোলা সম্ভব।
যেমন, বাস্তবে বিমান চালনা বা গাড়ি চালনায় দুর্ঘটনার শঙ্কা, চিকিৎসায় পরীক্ষামূলক অপারেশনে রোগীর প্রাণ সংহারের আশঙ্কা কিংবা সামরিক বা যুদ্ধ প্রশিক্ষণে সরাসরি আহত বা নিহত হবার শঙ্কাগুলো ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে পরাবাস্তব পরিবেশে একেবারেই নেই।

কেননা এখানে সম্পূর্ণ কৃত্রিম পরিবেশ বা উপাদান ব্যবহার করে বাস্তবের ন্যায় অবিকল দৃশ্য, মডেল ও পরিবেশ তৈরি করা হয়, যেগুলো কোনো কিছুই বাস্তব নয় আবার বাস্তব না হলেও এগুলো পুরোপুরি বাস্তবের ন্যায় বিধায় প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে বাস্তবতার অভাবে প্রশিক্ষণটি অসম্পূর্ণ বা বিফলতায় পর্যবসিত হয় না। একইভাবে এটি শিক্ষা, বিনোদনসহ দৈনন্দিন জীবনের নানা প্রয়োজনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, যার মধ্যে প্রধান প্রধান ক্ষেত্রগুলো নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো ।
শিক্ষা ও গবেষণায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি
কোনো কাজ বাস্তবে করার আগে তা কম্পিউটারে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সাহায্যে কৃত্রিমভাবে প্রয়োগ করে দেখাকে সিমুলেশন বলা হয়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে শিখন-শেখানো কার্যক্রমের জটিল বিষয়গুলোর মডেলিং ও সিমুলেশন তৈরি করে শিক্ষার্থীদের আকর্ষণীয়ভাবে শিক্ষা প্রদান করা যায়। বর্তমানে উন্নত বিশ্বে শিক্ষায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যাপক ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি যে কোনো শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকে আকর্ষণীয়, হৃদয়গ্রাহী, বাস্তবসম্মত ও সর্বোচ্চভাবে নিরাপদ করতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ যে কোনো প্রশিক্ষণে দুর্ঘটনা, প্রাণনাশ প্রভৃতির সম্ভাবনা শূন্যে নামিয়ে আনে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রমে যৌক্তিকভাবে খরচ কমিয়ে সাশ্রয়ী উপায়ে কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব।
যেমন, ভূমিকম্প বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে ধারণা লাভ, জটিল অণুর আণবিক গঠন, ডিএনএ গঠন, যা কোনো অবস্থাতেই বাস্তবে অবলোকন সম্ভব নয় কিংবা বিপজ্জনক, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে সেই সব পরিবেশ, পরিস্থিতি ও গবেষণালব্ধ ফলাফলকে বাস্তবায়নের পূর্বেই কৃত্রিমভাবে অনুভব করা যায় বিধায় তা অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত, অযাচিত ও অপ্রয়োজনীয় ঘটনা রোধ করতে সক্ষম।
সেনাবাহিনীতে যুদ্ধ প্রশিক্ষণ
বিভিন্ন বিরূপ পরিবেশে শত্রুর সাথে মুখোমুখি যুদ্ধে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হচ্ছে। অত্যাধুনিক অনেক যুদ্ধাস্ত্র সঠিকভাবে ব্যবহার, রাতে যুদ্ধ পরিচালনা, শত্রুর অবস্থান নির্ণয় ইত্যাদি কাজ নিখুঁতভাবে করার জন্য বর্তমানে অনেক দেশের সেনাবাহিনীতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হচ্ছে। সামরিক প্রশিক্ষণ, মহড়া, কোনো উৎপাদিত ধ্বংসাত্মক পণ্যসমূহের মান যাচাইয়ের পরীক্ষাসমূহ প্রভৃতি বিষয়গুলো ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে সম্পন্ন করা হলে তা পরিবেশ দূষণ ও বিপর্যয় রোধ করে।
ব্যবসায় বাণিজ্যে
ব্যবসায়িক কোনো এনভায়রনমেন্টে ভার্চুয়াল ট্যুর, বিপণন কর্মীদের প্রশিক্ষণ, কোনো প্রোডাক্টের প্রদর্শন, উৎপাদিত কিংবা প্রস্তাবিত পণ্যের গুণগত মান, গঠন, বিপণন, সম্ভাব্যতা যাচাই, মূল্যায়ন ইত্যাদি সব ধরনের কার্যক্রমে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সিমুলেশন পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। অনেক ব্যবসায়ে অনেক কম মূল্যে কোনো প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট এবং সার্ভিস প্রদানের জন্য VR ব্যবহার করা হচ্ছে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অনেক ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ উৎপাদন ব্যবস্থাকে সহজ ও ঝুঁকিহীন করে তোলে। বিপজ্জনক ও ক্ষতিকর দ্রব্যগুলো বাজারজাত করার আগে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ও সিমুলেটেড পরিবেশে সেগুলো পরীক্ষা করে নিলে তাতে কোনো কর্মচারীর জীবনের ঝুঁকি থাকে না ।
মহাশূন্য অভিযানে
মহাশূন্য অভিযানের প্রতিটি পর্বেই রয়েছে নানা ধরনের ঝুঁকি। প্রস্তুতি পর্বের নানা গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা, নভোচারীদের কার্যক্রম, নভোযান পরিচালনা সম্পর্কিত যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কিত প্রশিক্ষণে তাই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। কাল্পনিক পরিবেশে মহাকাশে গবেষণা পরিচালনা, মহাশূন্যে খাপ খাওয়ানোর মতো বিষয়গুলো পূর্বেই প্রশিক্ষণ নিতে পারছেন নভোচারীগণ ।
গেমস তৈরি
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে বর্তমানে বিভিন্ন আকর্ষণীয় গেমস্ তৈরি করা হচ্ছে। Xbox OneX, PS5 এবং কম্পিউটারে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি গেমস রয়েছে। যেমন- লিনডেন ল্যাবস কর্তৃক সেকেন্ড লাইফ, নিনটেনডো-এর Wii এবং ইলেক্ট্রনিক আর্টস-এর The Sims ইত্যাদি।
প্রকৌশল ও নগর উন্নয়নে
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রকৌশল বিভাগে ত্রিমাত্রিক মডেলিং টুলস ও পরিকল্পনার নকশা দেখার জন্য ব্যবহার করা হয়। এ পদ্ধতিতে প্রকৌশলীরা তাদের ত্রিমাত্রিক প্রকল্প দেখতে পারেন এবং কীভাবে প্রকল্পটি কাজ করবে তা ভালোভাবে বুঝতে পারেন।
কোনো ডিজাইন চক্রের শুরুতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হয়। এর ফলে কোনো ডিজাইনে ত্রুটি থাকলে সংশোধন করা যায়। নগর পরিকল্পনায় ত্রিমাত্রিক ভার্চুয়াল রিয়েলিটি-এর প্রয়োগ ঘটিয়ে নগর উন্নয়ন রূপরেখা, নগর যাতায়াত ব্যবস্থা ইত্যাদি সহজ ও আকর্ষণীয়ভাবে বর্ণনা করা যায়।
শিল্প কারখানায়
শিল্প কারখানার উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ও সিমুলেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদিত পণ্যের ডিজাইন কিংবা প্রয়োগসমূহের ভার্চুয়ালাইজেশন করা হয়। এর ফলে প্রকৃত উৎপাদন শুরুর পূর্বে পণ্যের ডিজাইনে কিংবা আউটপুটের যে কোনো ত্রুটি চিহ্নিত করে তা সংশোধনের মাধ্যমে উৎপাদন সংক্রান্ত ঝুঁকি মোকাবিলা করা সম্ভব হয়।
খেলাধুলা ও শরীরচর্চায়
গলফ, অ্যাথলেটিক্স (শরীরচর্চা), স্কেটিং, সাইক্লিং ইত্যাদিতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ট্রেনিং কিট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গরীরচর্চায় দক্ষতা পরিমাপ, কৌশল বিশ্লেষণের কাজে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হয়। এর ফলে খেলোয়াড়দের পোশাক, যন্ত্রপাতি ও কৌশল নির্ধারণ করা যায়।
বিনোদন ও মিডিয়াক্ষেত্রে
বিনোদনের অনেক ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহৃত হচ্ছে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের প্রোগ্রামে নতুন বৈশিষ্ট্য দিয়েছে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে নির্মিত ইংরেজি চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে The Lawnmower Man, The Matrix, Torn (1982 version), The Thirteenth Floor, eXistenZ, Vanilla Sky ইত্যাদি। তাছাড়াও সংগীত, ভিডিও তৈরি, বৈজ্ঞানিক প্রদর্শনী ইত্যাদিতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহৃত হয়।
চিকিৎসাক্ষেত্র এবং ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ
উন্নত বিশ্বে ডাক্তারদের আধুনিক মানের প্রশিক্ষণ প্রদানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে সার্জিক্যাল প্রশিক্ষণে এমআইএসটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ল্যাপরোস্কোপিক’ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। ফলে অত্যন্ত সহজে ও সুবিধাজনক উপায়ে বাস্তবে অপারেশন থিয়েটারে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির কল্যাণে জটিল সব অপারেশন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশগুলোর গঠন ও কার্য পর্যালোচনা, ডিএনএ পর্যালোচনা প্রভৃতি সম্পর্কে ব্যাপকভাবে জানা ও গবেষণা চালানো সম্ভব।
নবীন শল্য চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ, রোগ নির্ণয় প্রভৃতি কাজেও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মনোচিকিৎসকগণ মানসিক রোগীদের সাইকোথেরাপি দিতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করেন, যার মানসিক রোগীদের জীবন দর্শনের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে। ফলে MIST (Minimally Invasive Surgical Trainer) হলো একটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সিমুলেটর, যা দ্বারা বাস্তবের ন্যায় জীবন্ত মানুষের ওপর মেডিকেল শিক্ষার্থীদের অপারেশন করা শেখানো হয়।
কার ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে ড্রাইভিংয়ের নানা নিয়ম-কানুন খুব সহজেই আয়ত্ত করা সম্ভব। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে বাস্তবের মতো রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে প্রশিক্ষণার্থী খুব সহজেই বাস্তবে গাড়ি চালানোর সাহস অর্জন করে দ্রুত গাড়ি চালনা শিখতে পারে। বাংলাদেশ পুলিশের মহিলা সদস্যদের ড্রাইভিং শেখানোর জন্য ভার্চুয়াল কার সিমুলেটর ব্যবহার করা হয় ৷
বিমান চালনার প্রশিক্ষণ
উন্নত বিশ্বের বাণিজ্যিক বিমান সংস্থা কিংবা সামরিক বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে বিমান পরিচালনা প্রশিক্ষণে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করছে। এজন্য ফ্লাইট সিমুলেটর ব্যবহার করা হয়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে ফ্লাইট সিমুলেশনের ক্ষেত্রে স্বল্প খরচে বিমান চালকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা সম্ভব হয়।
ফ্লাইট সিমুলেশন হলো এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিকে কাজে লাগিয়ে বিশেষায়িত কম্পিউটার সিস্টেমসমূহ যেমন- ফ্লাইট সিমুলেটরসমূহের মাধ্যমে সিভিলিয়ান কিংবা মিলিটারি পাইলটদেরকে সত্যিকারের এয়ারক্র্যাফট ছাড়াই সেটি চালানোর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রতিটি যানচালক গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে চালকগণ যদি তাদের যান চালনায় পারদর্শী হয়, তাহলে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনা সম্ভব হয়। রেলপথ ও জলপথে চলাচলকারী যানের ক্ষেত্রে একইভাবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রয়োগ করে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
এ পদ্ধতিতে রেল চালককে রেল চালনার রুট, জরুরি মুহূর্তে করণীয় বিষয়াবলি পূর্বেই শেখানো যায়। জলযানের ক্ষেত্রে সঠিক গন্তব্যে সাবধানতার সাথে কীভাবে তা পরিচালনা করা যায়, তার কাল্পনিক উপস্থাপনার মাধ্যমে যান চলাচলে গতিশীলতা আনা যায় এবং বন্দরে জলযানের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
প্রাত্যহিক জীবনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির নেতিবাচক প্রভাব
ইতিবাচক প্রভাবের পাশাপাশি ভার্চুয়াল রিয়েলিটির নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
চড়া দাম ও জটিলতা
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সরঞ্জামাদির দাম অনেক চড়া হওয়ার কারণে সাধারণের মধ্যে এর প্রসার ও জটিলতা নিয়ে বিজ্ঞানীরা উদ্বিগ্নতায় আছেন। অনেক সময় এর হ্যান্ডসেটের গতি ব্যবহারকারীর স্বাভাবিক গতির সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে পারে না।
স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার মানুষের জন্য ক্ষতিকর। এটি মানুষের দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তির ক্ষতিসাধন করে।
কল্পনার জগতে বিচরণ
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে মানুষ তার কল্পনার রাজ্যে ইচ্ছেমতো বিচরণ করতে পারে। অনেক সময় ধরে কল্পনার জগতে থাকলে বাস্তবতা থেকে আস্তে আস্তে দূরে সরে যাবে। ফলে পৃথিবীতে বিপর্যয় নেমে আসবে।
মনুষ্যত্বহীনতা
ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে মানুষ বাস্তবিকের চেয়ে ভালো পরিবেশ ও মনের মতো সঙ্গী পাবে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যাপক প্রসারের কারণে মানুষের পারস্পরিক ক্রিয়া হ্রাস পাবে এবং মনুষ্যত্বহীনতা বেড়ে যাবে। ফলে ক্রমেই মানব সমাজ বিলুপ্ত হতে থাকবে।
এভাবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি আমাদের জীবনে ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করছে। আমাদের সকলের এর সঠিক ব্যবহার জানা উচিত। ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাচঁতে অতিরিক্ত ব্যবহারে সাবধান থাকতে হবে।