একবারে একসাথে অনেক বিট পাঠানো হয়

ডেটা ট্রান্সমিশন মেথড বা, ডেটা চলাচলের সকল পদ্ধতি সমূহ

ডেটা চলাচলের পদ্ধতি: যে পদ্ধতিতে এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে তথা এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে ডেটা বিটের বিন্যাসের মাধ্যমে স্থানান্তর বা ট্রান্সমিট হয়, তাকে ডেটা ট্রান্সমিশন মেথড বলা হয়)। ডেটা ট্রান্সমিশন মেথড বলতে মূলত ডেটা কমিউনিকেশন সিস্টেমে সংযুক্ত ডিভাইসগুলোর মধ্যে বিটের আদান-প্রদান বা বিনিময়ের প্রক্রিয়াকে বোঝানো হয়।

ক্লক পালস (Clock Pulse): কম্পিউটার ডেটা স্থানান্তরের সময় সংকেত সমন্বয়ের জন্য এর অভ্যন্তরে থাকা কোয়ার্টস ক্রিস্টালের কম্পনকে ক্লক পালস বলা হয়। কম্পাঙ্ক হলো প্রতি সেকেন্ডে সম্পন্ন করা পূর্ণ কম্পন বা স্পন্দনের সংখ্যা। কম্পাঙ্কের একক Hz। কোনো কম্পমান কণা ১ সেকেন্ডে যদি ১টি মাত্র পূর্ণ কম্পন বা স্পন্দন সম্পন্ন করে, তবে ঐ বস্তু বা কণার কম্পাঙ্ককে ১ Hz বলে। কম্পিউটারের প্রসেসরের স্পিড হিসেবে যে মেগাহার্জ বা গিগাহার্জ পরিমাপ করা হয়, সেটি আসলে প্রতি সেকেন্ডে এই কম্পনের পরিমাপ অনুসারে নির্ধারণ করা হয়।

ডেটা ট্রান্সমিশন এবং ডেটা কমিউনিকেশনের মধ্যকার পার্থক্য: ডেটা ট্রান্সমিশন হলো ডেটার বাস্তব স্থানান্তর। যেমন- বিট পোলারিটি, সিনক্রোনাইজেশন, ক্লক ইত্যাদি। আর দুইটি মিডিয়ার মধ্যে অর্থবহ বিনিময় হলো ডেটা কমিউনিকেশন।

ডেটা চলাচলের পদ্ধতি

ডিভাইসসমূহের মধ্যে অবস্থানগত দূরত্ব এবং ডেটার ক্ষুদ্রতম একক বিট-এর বিন্যাসের ভিত্তিতে ট্রান্সমিশন মেথডকে দুটি বেসিক শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। যথা-

  • প্যারালাল ট্রান্সমিশন (Paralal Transmission)
  • সিরিয়াল ট্রান্সমিশন (Serial Transmission)

ট্রান্সমিশন মেথডকে দুটি নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল-

প্যারালাল ট্রান্সমিশন (Paralal Transmission)

যে ডেটা ট্রান্সমিশনে অসংখ্য মাধ্যম দিয়ে একসাথে অনেক বিট সমান্তরালভাবে স্থানান্তরিত হয়, তাকে প্যারালাল ট্রান্সমিশন বলে। সাধারণত কম্পিউটারের অভ্যন্তরে থাকা বিভিন্ন সার্কিটগুলোর মধ্যে দূরত্ব খুব কম হওয়ার কারণে এবং এখানে ডেটাগুলো প্যারালাল পদ্ধতিতে কাজ করার কারণে এদের মধ্যে ডেটা স্থানান্তরের জন্য প্যারালাল ট্রান্সমিশন মেথড ব্যবহার করা হয়।

উদাহরণস্বরূপ প্যারালাল ট্রান্সমিশনে কী-বোর্ডের একটি ক্যারেক্টারকে বাইনারি এনকোড করে যে ৮ বিট কোড তৈরি করা হয়, তার সবগুলো বিট সমান্তরালভাবে সংযুক্ত ৮টি তারের মাধ্যমে একই সাথে উৎস থেকে গন্তব্যে প্রেরণ করে। একইভাবে n সংখ্যক ডেটা ট্রান্সমিশনের জন্য n সংখ্যক তার ব্যবহার করা হয়। এ সিস্টেমকে কম্পিউটার বাস বলা হয়।

এতে প্রেরক ও গ্রাহক যন্ত্র-এর পরষ্পর সমন্বয়ের জন্য একটি বা দুইটি কন্ট্রোল লাইন থাকে। প্যারালাল প্রিন্টার পোর্ট ও ক্যাবল ব্যবহার করে কম্পিউটারের সাথে প্রিন্টারের সংযোগ এর অন্যতম উদাহরণ। এছাড়াও অনেক সময় ভিডিও স্ট্রিমিং-এর ক্ষেত্রে দ্রুতগতিসম্পন্ন এই ট্রান্সমিশন পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

প্যারালাল ট্রান্সমিশনের সুবিধা

  • একসাথে বিপুল পরিমাণ ডেটা স্থানান্তরিত হয়
  • ডেটা দ্রুত ও অনেক বেশি দক্ষতার সাথে স্থানান্তরিত হয়

প্যারালাল ট্রান্সমিশনের অসুবিধা

  • দূরবর্তী স্থানের জন্য ব্যবহার সম্ভব নয়
  • প্যারালাল ট্রান্সমিশন অনেক ব্যয়বহুল

সিরিয়াল ট্রান্সমিশন (Serial Transmission)

দূরবর্তী অবস্থানে থাকা ডিভাইসগুলোর জন্য সিরিয়াল ট্রান্সমিশন ব্যবহার করা হয়। যে ডেটা ট্রান্সমিশন পদ্ধতিতে ধারাবাহিকভাবে একটি বিটের পর অপর বিট স্থানান্তরিত হয়, তাকে সিরিয়াল ট্রান্সমিশন বলে। এক্ষেত্রে ৮ বিট ডেটা স্থানান্তরের জন্য ৮টি ক্লক পালসের প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ এক একটি বিটের জন্য একটি করে ক্লক পালস প্রয়োজন।

সিরিয়াল ট্রান্সমিশনের ক্ষেত্রে ডেটা ট্রান্সমিশনের উভয় প্রান্তে প্যারালাল টু সিরিয়াল এবং সিরিয়াল টু প্যারালাল কনভার্টার ব্যবহৃত হয়। কম্পিউটার বা অন্যান্য ডিভাইসে বহুল ব্যবহৃত ইউএসবি (USB: Universal Serial Bus) পোট সিরিয়াল ট্রান্সমিশনের অন্যতম উদাহরণ।

সিরিয়াল ট্রান্সমিশনের সুবিধা

  • ধারাবাহিক বিট প্রেরণের নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি
  • যন্ত্রপাতি তুলনামুলক সহজ ও সাশ্রয়ী
  • নয়েজের প্রভাব কম

সিরিয়াল ট্রান্সমিশনের অসুবিধা

  • ধীরগতিসম্পন্ন ট্রান্সমিশন
  • উভয়প্রান্তে প্যারালাল টু সিরিয়াল এবং সিরিয়াল টু প্যারালাল কনভার্টার প্রয়োজন হয়

প্যারালাল ট্রান্সমিশন ও সিরিয়াল ট্রান্সমিশন এর মধ্যে পার্থক্য

প্যারালাল ট্রান্সমিশন ও সিরিয়াল ট্রান্সমিশন এর মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। নিচে বিস্তারিত দেয়া হল-

প্যারালাল ট্রান্সমিশনসিরিয়াল ট্রান্সমিশন
১. যে ডেটা ট্রান্সমিশনে অসংখ্য মাধ্যম দিয়ে একসাথে অনেক বিট সমান্তরালভাবে স্থানান্তরিত হয়, তাকে প্যারালাল ট্রান্সমিশন বলে১. যে ডেটা ট্রান্সমিশন পদ্ধতিতে ধারাবাহিকভাবে একটি বিটের পর অপর বিট স্থানান্তরিত হয়, তাকে সিরিয়াল ট্রান্সমিশন বলে
২. প্যারালাল ডেটা ট্রান্সমিশনে অসংখ্য মাধ্যম দিয়ে একবারে একসাথে অনেক বিট পাঠানো হয়২. সিরিয়াল ডেটা ট্রান্সমিশনে একটি মাধ্যম দিয়ে একবারে একসাথে অনেক বিট পাঠানো হয়
৩. ডেটা ট্রান্সমিশন উচ্চগতিসম্পন্ন৩. ডেটা ট্রান্সমিশন ধীরগতিসম্পন্ন
৪. খরচ বেশি৪. খরচ কম
৫. স্বল্প দূরত্বে অবস্থিত ডিভাইসসমূহের মধ্যে ডেটা ট্রান্সমিশনে ব্যবহৃত হয় ৫. অধিক দূরত্বে অবস্থিত ডিভাইসসমূহের মধ্যে ডেটা ট্রান্সমিশনে ব্যবহৃত হয়

এই ছিল ডেটা ট্রান্সমিশন মেথড বা, ডেটা চলাচলের সকল পদ্ধতি। উল্লেখিত বিষয়ে কোন অভিযোগ বা মতামত থাকলে কমেন্ট করে জানাবেন।

বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন:

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *