ওয়াইম্যাক্স কি? ওয়াইম্যাক্স এর সকল খুঁটিনাটি বিষয়
ওয়াইম্যাক্স: ওয়াইম্যাক্স (WiMAX) প্রযুক্তি হল বর্তমান সময়ের সর্বাধুনিক উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট প্রটোকল সার্ভিস যা তারবিহীন ব্যবস্থায় ১০ থেকে ৬০ কি.মি. পর্যন্ত ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান করে। ওয়াইম্যাক্স এর পুরো নাম Worldwide Interoperability for Microwave Access. Wimax নেটওয়ার্ক এর ব্যান্ডউইথ ৩০ Mbps থেকে ৭৫ Mbps পর্যন্ত কিন্তু স্থির ডিভাইসে ১ Gbps হতে পারে। একজন ব্যবহারকারীকে সর্বনিম্ন ৪-৮ Mbps ব্যান্ডউইথ কাজ করার সুযোগ দেয়।
সূচিপত্র
ওয়াইম্যাক্স ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক ও এর বৈশিষ্ট্য
ওয়াইম্যাক্সের মাধ্যমে অনেক বেশি ব্যবহারকারী বহুদূর এলাকা পর্যন্ত উচ্চগতিতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পেয়ে থাকে। প্রত্যন্ত অঞ্চল যেখানে সাধারণত ব্রডব্যান্ড সেবার কথা কল্পনাও করা যায় না সেখানেও বিনা তারে ব্রডব্যান্ড সেবা দেয়া যাচ্ছে ওয়াইম্যাক্সের মাধ্যমে। ওয়াইম্যাক্স পদ্ধতির প্রধানত দু’টি অংশ রয়েছে যেমনঃ-
বেজ স্টেশন ওয়াইম্যাক্স টাওয়ার
স্টেশন টাওয়ারেরর মাধ্যমে 50 KM এলাকাজুড়েও কভারেজ প্রদান করে। ওয়্যাইম্যাক্স বেজ স্টেশন ইনডোর ও আউটডোর টাওয়ার নিয়ে গঠিত। বেজ স্টেশনগুলো একটি ওয়াইম্যাক্স হারের সাথে যুক্ত থেকে নেটওয়ার্ক তৈরি করে এবং ইন্টারনেট সার্ভিস দেয়।
ওয়াইম্যাক্স রিসিভার
কোন কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত থাকে কিংবা ল্যাপটপের ভেতরে বিল্ট-ইন অবস্থায় থাকতে পারে। এ প্রযুক্তিতে প্রায় ৫০ কি.মি এলাকাজুড়ে ৭০ মেগাবিট পার সেকেন্ড (Mbps) হারে ডেটা ট্রান্সমিট হতে পারে এবং ওয়াইম্যাক্স নেটওয়ার্কে ২ থেকে ১১ GHz ফ্রিকুয়েন্সিতে ডেটা ট্রান্সমিট হয়। খুব অল্পসংখ্যক টাওয়ার স্থাপন করে বহু দূর পর্যন্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ইন্টারনেটে সেবা পৌছে দেয়া সম্ভব হয়েছে। ওয়াইম্যাক্স দুধরনের হতে পারে যেমন- ফিক্সড ওয়াইম্যাক্স এবং মোবাইল ওয়াইম্যাক্স।
ওয়াইম্যাক্সের মাধ্যমে প্রাপ্ত সার্ভিসসমূহ
ওয়াইম্যাক্সের মাধ্যমে যেসব সার্ভিস পাওয়া যায় তা হলো-
- ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল (ভিওআইপি)
- ইন্টারনেট প্রটোকল টেলিভিশন (আইপিটিভি)
- ওয়াইফাই এর হটস্পট
- মোবাইল টেলিফোন সার্ভিস এবং মোবাইল ডেটা টিভি
- মোবাইল ইমার্জেন্সি রেসপন্স সার্ভিস
- ফাইবার অপটিক ক্যাবলের বিকল্প পন্থা হিসেবে ব্যবহার করা যায় ৷
ওয়াইম্যাক্স এর সুবিধা
১. একক একটি বেজ স্টেশনের মাধ্যমে হাজার হাজার ব্যবহারকারীকে ইন্টারনেট সেবা দেয়া যায় ।
২. তারবিহীন উপায়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট অ্যাকসেস করা যায়।
৩. এই নেটওয়ার্ক বাস্তবায়ন অনেক দ্রুত সময়ে করা সম্ভব।
৪. প্রত্যন্ত অঞ্চলেরও সেবা পাওয়া যায়।
৫. ওয়াইম্যাক্সের মাধ্যমে ওয়াই–ফাই হটস্পটে ইন্টারনেট সেবা দেয়া যায়।
৬. তথ্য ও টেলিযোগাযোগ সেবাগুলো (VOIP, IPTV) প্রদান করা যায়।
৭. নিরাপদ ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধা প্রদান করা যায়।
৮. বহনযোগ্য সংযোগ প্রদান করা যায়।
৯. অন্যান্য নেটওয়ার্কের তুলনায় খরচ কম।
ওয়াইম্যাক্স এর অসুবিধা
১. একই টাওয়ারের অধীনে অনেক ব্যবহারকারী একই সময়ে ইন্টারনেট অ্যাকসেসের চেষ্টা করলে মারাত্মক ট্র্যাফিকের সমস্যা দেখা দেয় এবং ব্যান্ডউইথ কমে যায়।
২. অধিক দূরত্বে সংযোগের জন্য লাইন-অফ-সাইট এর প্রয়োজন হয়।
৩. ডেটা রেট অত্যন্ত ধীরগতির।
৪. খারাপ আবহাওয়া যেমন ঝড় বৃষ্টির কারণে এর সিগন্যালে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
৫. অন্যান্য ওয়্যারলেস যন্ত্রপাতিতে বাধার সৃষ্টি।
৬. বেশি বিদ্যুৎশক্তির প্রয়োজন হয়।
৭. বাস্তবায়ন ও পরিচালনা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
শেষ কথা, একটা সময় ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তি জনপ্রিয় থাকলেও সময়ের সাথে সাথে এটি হারিয়ে যায়, অর্থাৎ নতুন প্রযুক্তির কাছে আর টিকে থাকতে পারেনি। তবে এটি গ্রামীণ ও দূর্গম এলাকার জন্য ভালই উপযোগী। বর্তমানে ৪জি ও ৫জি সেবা সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে আছে, যার কারণে এখন ওয়াইম্যাক্স এর ব্যবহার নেই বললেই চলে।